চলমান বন্যায় দেশের ১০ জেলায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো এখনো পাঠদানের উপযোগী হয়নি। তা ছাড়া বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্কুল–কলেজগুলো যখন খোলার প্রস্তুতি চলছে, তখন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এই হাল।
জামালপুরের ছয়টি উপজেলায় তলিয়ে যাওয়া ১৯০টি বিদ্যালয়ে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। যমুনা বেষ্টিত চরাঞ্চলে এখনো অনেক বিদ্যালয়ে পানি রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনার পানিতে ইসলামপুর উপজেলার ডেবরাইপ্যাচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের সব আসবাব পানির নিচে। একই উপজেলার দেলিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর পানির স্রোত। একই উপজেলার পূর্ব বামনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসবাব পানিতে তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ১৯০টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হলেও রোববার থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে চরাঞ্চলের অনেক বিদ্যালয়ে এখনো পানি রয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
জামালপুরের ছয়টি উপজেলায় তলিয়ে গেছে ১৯০টি বিদ্যালয়। লালমনিরহাটের দুটি বিদ্যালয় তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জেলার চারটি উপজেলার ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের বেঞ্চসহ আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলীর দাবি, বেশির ভাগ বিদ্যালয় থেকে পানি নেমে গেছে।
পদ্মার পানিতে শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়ার ১৫টি গ্রামের পাশাপাশি ৪৯টি প্রাথমিক ও ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এসব বিদ্যালয় খোলা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা জেগেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুই উপজেলার কোনো বিদ্যালয়ের মাঠ ও রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আবার কোনো বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে। বন্যার পানি নেমে না গেলে এসব বিদ্যালয় আপাতত বন্ধ রাখা হবে।
যমুনার পানি বাড়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার ২৮টি প্রাথমিক এবং দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কবির বলেন, উপজেলার ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গম চরে মানিকদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাঙ্গুরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন যমুনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
রাজবাড়ীর চারটি উপজেলার ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদ্মা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এতে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চারটি, পাংশা উপজেলায় তিনটি, গোয়ালন্দ উপজেলায় নয়টি এবং কালুখালী উপজেলায় পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। পদ্মার পানিতে ফরিদপুরে ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। চরভদ্রাসনেই ১৫টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি উঠেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফরিদপুরে তিনটি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি স্কুলের কক্ষে পানি ঢুকেছে। তবে ১২ তারিখের আগেই স্কুলগুলো পাঠদানযোগ্য হবে।
সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের যমুনা চরে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এখনো পানির নিচে। জেলা প্রথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর এখনো পানি জমে আছে। কুড়িগ্রামে ৪৩টি বিদ্যালয়ে পানি ওঠে। ৫টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নীলফামারীতে বন্যায় ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে ৭টি, খালিশাচাপানী ইউনিয়নে ২টি, ঝুনাগাছ চাপনী ইউনিয়নে ৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিনে এমনটা দেখতে পেয়েছেন। তবে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫টি।
বন্যায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের চর ডিজাইনের দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।